বর্তমান দেশের পরিস্থিতির উপর রাজনীতির “নীতি” নিয়ে দু’একটি কথা বলতে চাই – লিখতে চাই । আমরা রাস্ট্রবিজ্ঞানে পড়েছি , রাজনীতিবিদরা রাস্ট্রক্ষমতায় গিয়ে রাস্ট্রের স্বর্বভৌমত্ব রক্ষা , জনগনের মঙ্গল সাধন , রাস্ট্রের সার্বিক কল্যাণ , জনগনের অভাব-অনটন দূরিকরণে নির্দেশনা , জননিরাপত্তা রক্ষা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়াদি বাস্তবায়নে কাজ করাই মূখ্য উদ্দেশ্য । এসব দিক থেকে রাজনীতিবিদরা বা রাস্ট্রনায়করা পিছিয়ে তা আমি বলছি না । কিছু কিছু সৎ ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জন্যই দেশ আজও টিকে আছে ।আজকে শুধু বলব , রাজনীতির নামে কিভাবে একটি মহল অপরাধজগৎ সৃস্টি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয় ? কারা , কিভাবে সন্ত্রাস সৃস্টি করে জনসাধারণ , রাস্ট্র বা সরকারের সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ! কিভাবে পার্টির ব্যানার বিক্রি করে পদ-পদবি দখল করে প্রতিপত্তি বিস্তারের মাধ্যমে জনকল্যাণের নামে রাতারাতি কোটি কোটি অবৈধ টাকার মালিক হয় ?
এ ব্যপারে আলোকপাত করার জন্য একটু পিছনে ফিরে তাকাতে চাই – বলতে চাই , নিজের প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য কোন কোন রাজনীতিবিদ বা ছাত্র নেতারা এমন কোন দৃস্টতা নেই করেন না । মানব কল্যাণের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা পরিণত হয় ভয়ঙ্কর শক্তিশালী “দানব” রুপে – হয়ে উঠে মানবিকতাহীন মুখোশধারী নেতা । এই সৃস্ট “দানব”রাই প্রকৃত রাজনীতিবিদ বা রাস্ট্রনায়কদের মহা বিব্রত অবস্থায় ফেলে দেশ ও জাতির ভাবমূর্তি নস্ট করতে সদা ব্যস্ত থাকে ।
১৯৭৪ সাল – আমি তখন নটর ডেম কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র ।সারা জাতি একটি খবর দেখে হতবিহল্ব হল – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহসিন হলে সেভেন মার্ডার । এই নিস্টুর হত্যাকান্ড তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল । রাজনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন বিরোধেই খুনের শিকার হয় সূর্যসেন হলের ৭ আবাসিক ছাত্র । পরে পুলিশি তদন্তে প্রকাশ পায় তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের নাম । তখন ক্ষমতাসীন সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গ্রেফতার হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক । দীর্ঘ প্রকৃয়ার পর বিচারে শফিউল আলম প্রধানের মৃত্যুদন্ড হয় কিন্তু ‘৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তাকে মুক্ত করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজে লাগান ।
এরকম বহু উদহারণ আছে । রাজনীতি ও রাস্ট্রকে কলুষিত করার আরেক নাম ‘ ৮০ দশকের কালিগঞ্জের ইমদু – যে রাজনীতিবিদদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে দিনে-দুপুরে খুন-খারাপী করে অবৈধ টাকা-পয়সা বানিয়ে লাইন-টাইমে আসে । জাসদ নেতাকে খুনের পর ইমদু জাসদ থেকে বহিষ্কারের পর বিএনপিতে যোগ দিয়ে যুবদলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আরও বেপোরোয়া হত্যার রাজনীতি শুরু করে অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয় । এমনও প্রবাদ আছে , “ কালীগঞ্জের মা’য়েরা ইমদুর ভয় দেখিয়ে বাচ্ছাদের ঘুম পাড়াত”। সেই অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকা উপার্জন কারী ইমদুরও পতন হয়েছিল ফাঁসি কার্য্যকরের মাধ্যমে ।ঠিক এরকমই রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জন্ম হয়েছিল আরেক “দানব” খুলনার এরশাদ শিকদারের – সব রাজনৈতিক দলের ছাতির নিচে আশ্রয় ছিল তার । খুনের পর খুন করে ভৈরব নদীতে ফেলে দিত লাশ ।খুন এবং অবৈধভাবে টাকা কামাতে পাপের বোঝা ভারী হতে হতে পরিশেষে এক যুবলীগ নেতাকে হত্যার পর রাস্ট্রের নীতি নির্ধারকদের দৃস্টিতে আসে এবং গ্রেফতারের পর পুলিশ রিমান্ডে বেরিয়ে আসে এরশাদ শিকদারের নিস্টুর সব খুন – ঘুম -নারী কেলেঙ্কারী ও তার অভয় রাজ্যের সব ঘটনা – কাহিনী । শেষ পর্যন্তু বিচার কার্যে এই “দানব”য়েরও ফাঁসি হয়েছিল । অবৈধভাবে কামানো কোটি কোটি টাকার একটি কানা -কড়িও সাথে নিতে পারেনি এরশাদ শিকদার । ইমদু , গলাকাটা কামাল , এরশাদ শিকদার সবাই রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে শুধু গডফাদারদের সন্তুষ্ট করার জন্যই যুগে-যুগে মাফিয়াদের জন্ম দিয়েছে । কিন্তু শেষবেলায় আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা ও গডফাদাররা কেউ পাশে থাকেনি । এটাই বাস্তবতা ।
পুরানো সেই মাফিয়া মাফিয়া খেলা , চাঁদাবাজির বংশবিস্তার এখনও শেষ হয়নি । মাফিয়া চক্রের শেষ পরিনতি কি হয় তা কেন ওরা পূর্বের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না ? আবারও কেন রাজনীতির নামে সারা দেশে তৈরী হচ্ছে অপরাধজগৎ ?
আজকাল দেশে আলোচনার মূখ্য বিষয় “ক্যাসিনো” । এই ক্যাসিনো বা একজন জি কে শামীম , খালেদ রাতারাতি তৈরী হয়নি । হাজার হাজার কোটি টাকার ঠিকাদার কিভাবে কারা নিয়ন্ত্রন করে গরিবের পেটে লাথি মারে তা আজ বাংলার জনগণ জানতে চায় ! কারা কি ভাবে শেয়ার পেত ? গডফাদারদের নেপথ্যের কল্প-কাহিনী সবই প্রকাশ্যে আসা প্রয়োজন । ক্যাসিনোতে গ্রেফতারকৃতদের অতীত ও বর্তমান যেভাবে প্রকাশ হচ্ছে ঠিক সেইভাবে নেপথ্যের নায়কদের আদ্য-পাদ্য প্রকাশ করে বাংলার জনগণকে জানতে দিন । ছাত্রনেতাদের পৃষ্টপোষক কারা ? ছাত্রলীগের দীর্ঘ্যদিনের ঐতিহ্য-সুনাম নস্টের আড়ালে গডফাদার কারা ? এসব জানতে দিন । বাস্তবতা এড়িয়ে গিয়ে রাস্ট্রে ধূম্রজাল সৃস্টি করে সরকারকে বিতর্ক করা ঠিক নয় । সরকার দেশে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে । সরকার বা মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের জোয়ার ব্যহত করার জন্যই কি এই প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ? শেখ হাসিনার অর্জিত রাজনৈতিক ইমেজকে নস্ট করার জন্যই কি এই ষড়যন্ত্র ?
এখনো শেখ হাসিনা মুক্তিযাদ্ধের চেতনার ইমেজ , আওয়ামী লীগের ইমেজ । মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার এই ইমেজের উপর ভর করেই বার বার রাস্ট্র ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ । সেই ইমেজকে নস্ট করার অধিকার করো নেই । কোন পরাশক্তির ইঙ্গিতে বিএনপি নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে – তা খতিয়ে দেখা খুবই জরুরী !
আমি মনে করি , আওয়ামী লীগের পূর্বের ইমেজ ফিরিয়ে আনতে হলে আগামী কাউন্সিলে সমস্ত অনুপ্রবেশকারী নস্টাদের বাদ দিতে হবে । ওরা পরিকল্পিত ভাবে দলে ডুকে বিভিন্ন অপকর্ম করে আওয়ামী লীগের ইমেজকে নস্ট করছে ।
বঙ্গবন্ধুর দলে যাকে তাকে নেয়া যায়না – শুধু জয় বাংলা শ্লোগান দিলেই মুক্তিযাদ্ধের পক্ষের লোক হওয়া যায়না – যার রক্ত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রক্ত , ওরা কি করে ৩০ লক্ষ শহীদের মর্য্যদা বুঝবে ? ওরা কি করে এই রক্তে ভেজা মাটি ও মানুষকে ভালবাসবে ?
পরিশেষে বলব , মানবরুপী “ দানব”রা অবৈধভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার মালিকদের মনে রাখা দরকার এই দেশটা আমাদের সবার । অবৈধ কাজ করে বেশীদিন সমাজ টিকা যায়না -পতন আসবেই । দিনশেষে সাময়িক বাহাবা পেলেও পরিশেষে কেউ পাশে থাকেনা ।এর বাস্তব প্রমান আপনারাই । এরশাদ শিকদার , গলাকাটা কামাল , ইমদু সবারই অবৈধ রাজ্যের পরিনতি দেখেছি আমরা ।
বর্তমানে যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চলছে । সেচ্ছাসেবক লীগ , শ্রমিক লীগ আওয়ামী লীগের নেতারা যারা অবৈধ কাজে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেবেননা জননেত্রী শেখ হাসিনা । তিঁনি রাজনীতি আবার রজনীতিবীদদের হাতে ফিরিয়ে এনে আওয়ামী লীগের স্বচ্ছতা প্রমান করবেন । রাজনীতির নামে রাজনীতির মুখোশধারীদের , অবৈধ ব্যবসায়ীদের , দুর্নীতিবাজদের অপরাধজগৎ সৃস্টি করে দেশ , জাতি ও সরকারের ভাবমূর্তি নস্ট করার আর সুযোগ দেবেননা শেখ হাসিনা । দুর্বৃত্তায়ন প্রকৃত রাজনীতির ইমেজকে সর্বনাশ করছে । অন্যায়কারী , দখলবাজ ভূমিদস্যু , অসৎ দুর্নীতিবাজদের কবল থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করে সুস্থ্যধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে সত্যিকারের দেশপ্রমিক রাজনীতিবিদদের কাছে । আর যেন “রাজনীতির” নামে তৈরী না হয় অপরাধজগৎ । রাজনীতি যেন ফিরে আসে “নীতি”তে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করছি ।
আব্দুর রউফ মাওলা
সম্পাদক , মাসিক মরুলেখা – কুয়েত
সভাপতি – ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরাম ( IMF ) কুয়েত চ্যাপ্টার ।